দীর্ঘ সময় ধরে বাশার আল-আসাদের শাসনের পর একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। এই পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেশটি সম্প্রতি একটি নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচন করেছে- ‘সোনালি ঈগল’। এটি শুধু একটি প্রতীক নয় বরং সিরিয়ার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় নতুন আত্মপরিচয়ের প্রকাশ।
দীর্ঘদিন সিরিয়ার জাতীয় প্রতীক ছিল বাজপাখি আকৃতির একটি প্রতীক, যা বাথ পার্টির পরিচয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর সেই প্রতীকের প্রতিস্থাপন হিসেবে এখন স্থান পেয়েছে সোনালি ঈগল। এই ঈগল প্রতীকটিকে বলা হচ্ছে ‘স্বাধীনতার আকাশে দৃঢ়তা ও মুক্তির নবায়নকৃত প্রতীক’।
সোনালি ঈগলের প্রতীকী ব্যাখ্যা:
- তিনটি তারা: ঈগলের মাথার উপরে থাকা তিনটি তারা সিরিয়ার জনগণের মুক্তি এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।
- লেজের পাঁচটি পালক: উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও কেন্দ্র- দেশের পাঁচটি ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রতীক।
- ডানার ১৪টি পালক: সিরিয়ার ১৪টি প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করে, যার প্রতিটিই বিগত ১৪ বছরের সংঘাত ও প্রতিরোধের ইতিহাস বহন করে।
গত ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন আহমেদ আল-শারা। তাঁর নেতৃত্বেই সিরিয়ায় একটি নতুন রাজনৈতিক পর্বের সূচনা হয়। দামেস্কের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচনের সময় তিনি বলেন:
“সোনালি ঈগল আমাদের শক্তি, দৃঢ়তা, গতি ও উদ্ভাবনের প্রতীক। আমরা অপমানজনক অধ্যায় পেছনে ফেলেছি, এখন শুরু হয়েছে পুনর্জাগরণের সময়।”
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শাইবানি জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক বৈঠকে সিরিয়ার নতুন জাতীয় পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে। তিনি বলেন:
“আমরা আর ফাঁকা স্লোগানে বিশ্বাস করি না। এখন আমাদের লক্ষ্য জনগণের সম্মান এবং দেশের বৈধ অবস্থান নিশ্চিত করা।”
এই বার্তা পশ্চিমা বিশ্বের কাছে একটি কৌশলগত ঘোষণা- যে সিরিয়া আগের মতো বাথ পার্টি বা একনায়কতন্ত্রনির্ভর রাষ্ট্র নয়, বরং একটি জাতীয় ঐক্যভিত্তিক নতুন কাঠামো নির্মাণে এগোচ্ছে।
নতুন প্রতীক ঘোষণার পর রাজধানী দামেস্কসহ বিভিন্ন শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। উমাইয়া স্কয়ার, লাতাকিয়া, আলেপ্পো, হামা, দেইর আল-জোর, ইদলিব- এই সব শহরে উৎসব পালন করা হয়। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে একটি জাতীয় বার্তা পাঠানো হয়, যেখানে বলা হয়:
“এই প্রতীক স্বাধীনতার আকাশে আমাদের দৃঢ়তা ও মুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।”
সিরিয়ায় প্রায় আড়াই দশক ধরে বাশার আল-আসাদ ও তাঁর পরিবার ক্ষমতায় ছিল। ২০২৩ সালের শেষ দিকে তিনি রাশিয়ায় আশ্রয় নেন এবং দেশটির ক্ষমতা চলে যায় অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। সেই সরকার প্রধান আহমেদ আল-শারা এখন নতুন একটি সাংবিধানিক কাঠামো গঠনের পথে এগোচ্ছেন। সোনালি ঈগলের মতো নতুন প্রতীক সেই পথচলার প্রথম প্রকাশ্য সঙ্কেত।
সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক ‘সোনালি ঈগল’ শুধুমাত্র একটি নকশাগত রূপান্তর নয়। এটি দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, জাতীয় ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন অবস্থানের প্রতিফলন। এটি যেমন বাথ পার্টির যুগের অবসান চিহ্নিত করছে, তেমনি এক নতুন সিরিয়ার আত্মপরিচয় তৈরির ঘোষণাও বহন করছে।