ভারতের পুনে শহরের ঐতিহাসিক দুর্গ ‘শনিবার ওয়াড়া’-এর খোলা মাঠে তিন-চারজন নারী নামাজ আদায় করেন, এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় দেশটিতে নতুন করে ধর্মীয় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেত্রী মেধা কুলকার্নির নেতৃত্বে হিন্দুদের একটি দল নামাজ অনুষ্ঠিত স্থানে ‘গোমূত্র’ ছিটান। ওই কার্যক্রমের ভিডিওও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, নামাজের স্থানটিতে ‘গোমূত্র’ ছিটানো হচ্ছে এবং শিব বন্দনা চলছে।
পুনের ‘শনিবার ওয়াড়া’ মারাঠা সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক স্থাপনা। পুনে দুর্গ নামেও পরিচিত। মহারাষ্ট্র রাজ্যের মন্ত্রী নিতেশ রানে নামাজের সমালোচনা করে বলেন, “শনিবার ওয়াড়ার একটি ইতিহাস আছে। এটি সাহসিকতার প্রতীক। শনিবার ওয়াড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ। যদি হিন্দুরা ‘হাজি আলী’-তে হনুমান চালিসা পাঠ করে, তাহলে মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে কি না?”
তিনি আরও বলেন, “মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করুন। যদি ‘হাজি আলী’-তে হনুমান চালিসা বা আরতি করা হয়, তাদের আর অপমানবোধ করা উচিত হবে না।”
বিরোধী নেতারা বিজেপি সংসদ সদস্যের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপির মুখপাত্র রুপালি পাতিল থোম্বরে পুলিশের প্রতি ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “নিতেশ হিন্দু বনাম মুসলমান ইস্যু তুলছেন। অথচ পুনেতে দুই সম্প্রদায় শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করে।”
এদিকে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) মুখপাত্র ওয়ারিশ পাঠান বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুমতবাদ ধ্বংসের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “তারা শুধুই ঘৃণা ছড়াচ্ছে। যদি তিন-চারজন মুসলিম নারী জুমার দিন এক জায়গায় নামাজ আদায় করেন, তাতে কী সমস্যা? যখন হিন্দুরা ট্রেন বা বিমানবন্দরে তাদের ধর্মীয় আচার পালন করে, আমরা কখনো আপত্তি জানাই না।”
ওয়ারিশ আরও বলেন, “এএসআই-সুরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। তিন মিনিটের নামাজের জন্য এত সমস্যা কেন? সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত আছে। তখনও ঘৃণা ছড়ানো কেন?”
পুলিশ জানিয়েছে, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) এক কর্মকর্তা দুর্গের মাঠে নামাজ আদায় করার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় নারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। দুর্গের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, “শনিবার ওয়াড়া এএসআই-সুরক্ষিত স্থাপনা। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”