মার্কিন হামলার ক্ষতচিহ্ন এখনো শুকায়নি, তবুও পিছু হটছে না ইরান। বরং আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। রবিবার (২ নভেম্বর) এক ভাষণে তিনি বলেন, “কয়েকটা ভবন বা কারখানা ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না। আমরা আবারও সবকিছু গড়ে তুলবো—আর তা আগের চেয়েও শক্তিশালী হবে।”
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা পরিদর্শনের সময় এই মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি দেশের পারমাণবিক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন এবং পুরো কার্যক্রম পর্যালোচনা করেন।
ইরানের এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক উত্তেজনার ছায়া। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক ইরানি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যা নিয়ে তেহরান-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে। সেই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন—“ইরান যদি ওই ধ্বংস হওয়া স্থাপনাগুলো পুনর্গঠনের চেষ্টা করে, তাহলে নতুন করে হামলার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
হোয়াইট হাউসের দাবি, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইরানের বক্তব্য, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র বেসামরিক ও বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে, যেমন—চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ও শক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
এই প্রেক্ষাপটেই রবিবার প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন,
“আমরা মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করছি। আমাদের পারমাণবিক কার্যক্রম রোগ নিরাময়, চিকিৎসা গবেষণা এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য। অস্ত্র তৈরি আমাদের লক্ষ্য নয়, বরং জ্ঞান ও বিজ্ঞানে শক্তিশালী হওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।”
তার এই বক্তব্য ইরানের জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপ, নিষেধাজ্ঞা আর সামরিক হুমকি—কোনোটিই যেন ইরানের পথ থামাতে পারছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বার্তা শুধু দেশের ভেতরের জনগণের উদ্দেশে নয়, বরং স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক সংকেত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি—যে ইরান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত, দৃঢ় এবং আত্মনির্ভর।

