ইসরায়েলের ওপর তেহরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রেক্ষিতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার (২ অক্টোবর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাইডেন স্পষ্টভাবে বলেন, তিনি এ ধরনের হামলাকে সমর্থন করবেন না।
বাইডেনের এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রায় ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, যা এ বছর এপ্রিলের পর থেকে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলা। তেহরান দাবি করেছে, এই হামলা গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি আক্রমণের পাশাপাশি হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) নেতাদের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যদিও ইসরায়েলে এই হামলায় তেমন কোনো গুরুতর ক্ষতি হয়নি, তবে দখলকৃত পশ্চিম তীরে একজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পগুলোকে হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ইরানের প্রতিরক্ষা কাঠামোর অংশ হিজবুল্লাহ এখন দুর্বল। এ কারণে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের হামলার ঝুঁকি বেশি।”
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও জি-৭-এর অন্যান্য নেতারা ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। হোয়াইট হাউজ এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জি-৭-এ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং যুক্তরাজ্যের নেতারা ইরান-ইসরায়েল পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আলোচনার পর বাইডেন জানান, “আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করব এবং তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইব। আমাদের সবার মতামত এক—প্রতিক্রিয়াটা হতে হবে ন্যায্য ও সঠিক অনুপাতে।”
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েলের ওপর তাদের প্রভাব সীমিত। এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইসরায়েলে হামলাকে ন্যায়সংগত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, তবে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে তেহরানের অনিচ্ছার কথা জানিয়েছেন। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সতর্ক করেছে যে, ইসরায়েল যদি প্রতিশোধ নেয়, তাহলে তারা “বড় ধ্বংসের” সম্মুখীন হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের গাজা এবং লেবাননে চলমান যুদ্ধের পটভূমিতে এই উত্তেজনা দুটি শক্তিশালী সামরিক শক্তির মধ্যে আরও বড় সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মার্জান বিশারা সতর্ক করে বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইরান এবং ইসরায়েল একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণে যায়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।”
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে আরও বড় সংঘাত রোধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করছে।