ভারতের সেনাবাহিনীর আসাম কমান্ড সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে প্রতিবেশী বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আসামের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে তারা।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থার কারণে আসামের চারটি জেলা—তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, চড়াইদেও ও শিবসাগরে ‘আর্মড ফোর্সেস (স্পেশাল পাওয়ারস) অ্যাক্ট’ বা এএফএসপিএ-এর কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আসাম কমান্ড এ সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। এই আইনের আওতায় সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এ চার জেলার যেকোনো স্থানে অভিযান চালিয়ে যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবেন, যেখানে কোন প্রকার আদেশ বা গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রয়োজন হবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রতিবেশী বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে আসামের সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশকারীদের অধিক হারে প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং এটি রাজ্যজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে, ১৯৯০ সাল থেকে আসামে বিভিন্ন সময়ে এএফএসপিএ জারি করা হয়েছে। এই আইনটি ছয় মাস পর পর পুনর্বিবেচনা করা হয়। সর্বশেষ গত বছর অক্টোবর মাসে আসামের জোরহাট, গোলাঘাট, করবি আঙলং, দিমা হাসাও, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, চড়াইদেও ও শিবসাগরে এ বিশেষ সামরিক আইনটি জারি করা হয়। জোরহাট, গোলাঘাট, করবি আঙলং এবং দিমা হাসাও থেকে এই আইন প্রত্যাহার করা হয়েছে, কিন্তু ১ অক্টোবর থেকে বাকি চার জেলায় বিশেষ আইনটি কার্যকর রাখা হয়েছে।
এআইএফএসপিএ আইনটি নিয়ে সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীরা বরাবরই বিরোধিতা করে আসছেন। এই আইনটিকে কঠোর আইন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং সশস্ত্র বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এটি দায়ী করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নাগাল্যান্ডের মন জেলায় একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর এ আইন প্রত্যাহারের দাবিও তীব্র হয়েছে। ওই সময় একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযানের সময় ১৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল, যা ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার সৃষ্টি করে।
এভাবে আসামের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশেষ সামরিক আইন বাড়ানোর ফলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।