যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদ ফিরে পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগের অন্ত নেই। তারা অস্বীকার করতে পারছেন না যে ট্রাম্পের শাসন আমলে ন্যাটোর সংহতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ট্রাম্পের সময়ে ইউরোপের প্রতিরক্ষা খরচ বৃদ্ধি না হলে তিনি ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। বর্তমানে, ইউরোপীয় নেতারা “ট্রাম্প-প্রুফিং” নীতির আওতায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের সংকটময় অবস্থার সামাল দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অপরিসীম। একজেটার ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এবং ন্যাটোর সাবেক কর্মকর্তা জেমি শিয়া মন্তব্য করেন, “যুক্তরাষ্ট্র মানে ন্যাটো এবং ন্যাটো মানে যুক্তরাষ্ট্র।” তিনি উল্লেখ করেন যে জার্মানির উইসবাডেনে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার জন্য যে নতুন কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে, তা মার্কিন রসদ এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২৪ সালে রেকর্ড ৯৬৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। অপরদিকে, ৩০টি ইউরোপীয় মিত্র এবং কানাডার সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেট ৫০৬ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বাজেটের ৩৪ শতাংশ। ৩২টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২৩টি সদস্য এ বছর নিজেদের জিডিপির ২ শতাংশের বেশি ব্যয় করার প্রত্যাশা করছেন। ২০১৪ সালে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা খরচের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটির তুলনায় বর্তমান পরিসংখ্যান অনেকটাই কম।
এখন ইউরোপে এক লাখেরও বেশি মার্কিন সামরিক কর্মী নিযুক্ত রয়েছে। ২০২২ সালের জুনের পর থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের জবাবে এই সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে জার্মানিতে অবস্থানকারী মার্কিন সেনারা, বাইডেনের নির্দেশে তিন হাজার সেনাবিশিষ্ট একটি ব্রিগেড রোমানিয়ায় পাঠানো হয়েছে, যা পোল্যান্ডের প্রধান সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থিত।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস সম্প্রতি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, ইউরোপের অধিকাংশ অংশ প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর ব্যাপারে ধীরগতিতে ছিল।” ২০১৪ সালের রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর ইউরোপ যে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি, তা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ পায়।
নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের বক্তব্য আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি রাশিয়াকে যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে ‘যা খুশি তা করতে’ উৎসাহিত করবেন। এর ফলে, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে।
আগামী ন্যাটো সম্মেলনের আগে প্রতিরক্ষা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে, যা সম্ভবত ২.৫ বা ৩ শতাংশে পৌঁছাবে। ট্রাম্পের আগ্রাসী কৌশল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরণ ন্যাটোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর জন্য।
ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের যোগদানের পর, ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা পূর্বদিকে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পোল্যান্ড, যা জিডিপির ৪ শতাংশ বাজেটের দিকে যাচ্ছে, অস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে দ্রুত গতিতে রয়েছে। পোলিশ ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের প্রজেমিস্লো বিস্কুপের বক্তব্য, “প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি আমাদের রাজনীতিতে বিতর্কিত নয়। আমাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
এদিকে, ট্রাম্প যদি কিয়েভে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন এবং ইউক্রেনকে অসম্মানজনক শান্তির জন্য চাপ দেন। তবে পূর্বাঞ্চলের জোট সদস্যদের জন্য এটি এক বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এতে তাদের প্রতিরক্ষা খরচ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার জায়গা নেই।
মোটকথা, ট্রাম্পের নেতৃত্বে ন্যাটো এবং ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢাকা পড়তে পারে।
ড্যান সাব্বাঘ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পাদক; দ্য গার্ডিয়ান