বিশ্ব দরবারে দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নত করা বিশেষভাবে জরুরি। একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারি। যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার প্রসার, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক গঠনের মাধ্যমেই আমরা একটি সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব।
বিশ্বজুড়ে তরুণরাই সমাজ পরিবর্তনের শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তারা শুধু ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না বরং উদ্ভাবনী চিন্তা, সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছেন।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি- তরুণরাই স্টার্টআপ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) এবং প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছেন। অনলাইন ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ও ই-কমার্সের মাধ্যমে তারা হাজারো মানুষের আয়ের পথ খুলে দিচ্ছেন। পাশাপাশি, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মীদের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত করছেন।
উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার- নতুন চিন্তাভাবনা ও উদ্ভাবন তরুণদের প্রধান শক্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, অটোমেশন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণা ও শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীলতার সুযোগ তৈরি হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্ভাবনী চিন্তা আরো বিকশিত হবে।
সামাজিক সমস্যার সমাধান- তরুণরাই তাদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন- পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি এবং সবুজ উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণরাই পরিবেশ দূষণ কমানোর চেষ্টা করছেন। প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য ও উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টেকসই জীবনধারা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সকল স্থানে তরুণদের অবদান অপরিহার্য।
নারীর ক্ষমতায়ন- নারীদের জন্যেও প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এতে নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হচ্ছে। এটি আরো প্রসার করা শ্রেয়।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়- তরুণদের অনেক ক্ষেত্রে অর্থায়নের অভাব, অভিজ্ঞতার ঘাটতি, বাজার প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি সহায়তা, বিনিয়োগের সুযোগ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং মেন্টরশিপের প্রয়োজন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে তারা নিজেদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে পারেন।
বাংলাদেশে তরুণদের ভূমিকা- বাংলাদেশে তরুণদের সংখ্যা অনেক। তাই তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদে তৈরি করা রাষ্ট্রের মহান দায়িত্ব। তারা স্টার্টআপ, সামাজিক উদ্যোগ এবং ডিজিটাল ব্যবসার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। তবে এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ, নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করা জরুরি। পাশাপাশি তাদের নতুন নতুন খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে উৎসাহ দেওয়া জরুরি।
সঠিক সহায়তা ও সুযোগ পেলে তরুণরাই সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত হয়ে উঠবে অবশ্যই। কারণ তারা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়, পাশাপাশি সামাজিক অগ্রগতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রম সমাজকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে পারে। প্রযুক্তি, শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তরুণদের অবদান সমাজকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল করে তুলতে পারে। তাই তরুণদের যথাযথ দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করা আমাদের সকলের দায়িত্ব, বিশেষ করে রাষ্ট্রের নজর প্রয়োজন।
লেখক– এফ.আর. ইমরান; সাংবাদিক- ‘সিটিজেনস ভয়েস’