দেশে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অথচ আমরা প্রয়োজনীয় পরিমাণে সরবরাহ করতে পারছি না। ১৮ কোটি মানুষের জন্য যে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন, সেই চাহিদা মেটানো এখনো আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো কীভাবে আমরা জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে পারি। পাশাপাশি কীভাবে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারি।
একটি দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো জ্বালানি। আমরা যদি পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে না পারি, তবে যতই উন্নয়ন পরিকল্পনা করি না কেন তার কোনো কার্যকর ফল আসবে না। এ আলোচনার (এলপিজি কনক্লেভ) শিরোনামে তিনটি শব্দ ব্যবহার হয়েছে—অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি এর সঙ্গে আমরা সমাজ শব্দটি যোগ করতাম, তাহলে আলোচনা আরো পরিপূর্ণ হতো। কারণ জ্বালানি কেবল অর্থনৈতিক বিষয় নয়; এটি গভীরভাবে সামাজিক বিষয়ও বটে।
আমাদের সমাজে জ্বালানির চাহিদা যে হারে বেড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের জীবনযাত্রার মান যত উন্নত হচ্ছে, জ্বালানির প্রয়োজন ততই বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। এমন এক সময় ছিল, যখন আমরা ছাত্রজীবনে পড়াশোনার সময় উন্নয়নের মানদণ্ড হিসেবে একটি সূচক ব্যবহার করতাম। সূচকটি ছিল জনপ্রতি কত কিলোওয়াট জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে। কারণ তা দিয়েই একটি দেশের উন্নয়নের স্তর নির্ধারণ করা হতো। আজকাল হয়তো সেই পরিমাপটি খুব বেশি দেখা যায় না, কারণ জ্বালানির ধারণা ও ক্ষেত্র এখন অনেক বিস্তৃত। জ্বালানি ব্যতিরেকে আধুনিক বিশ্ব এক মুহূর্তও চলতে পারে না। সুতরাং জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, যেকোনো মূল্যে আমাদের জ্বালানির সরবরাহ বাড়াতে হবে।
আমাদের নিশ্চিত করতে হবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও যেন এ জ্বালানি সুবিধা পান। সেটি বিদ্যুৎ হোক, গ্যাস হোক, কিংবা পেট্রোলিয়াম—এলপিজি, এলএনজি, সিএনজি—যে রূপেই হোক না কেন জ্বালানির চাহিদা ক্রমাগত বাড়বেই। তাই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত—জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে, টেকসই ও ন্যায্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। যারা সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি খাতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন, তাদের এ বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত—এ কথা আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই।
এ কনক্লেভের প্রধান অতিথি (বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা) তার বক্তব্যে রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের জ্বালানি খাতের নানা অনিষ্টের মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। আমি বিনীতভাবে বলতে চাই, আমি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন নই, যিনি দাঁড়িয়ে বলতে পারেন যে তিনি রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন। কাজেই সেই অভিযোগের অংশীদারত্ব আমার ওপরও বর্তায়। একইভাবে আমাদের সামনে যারা ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের সম্পর্কেও কিছু মন্তব্য এসেছে। আবার বক্তাদের অনেকে সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক কিংবা সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের দিকেও আঙুল তুলেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, দোষারোপ নয়, আমাদের মনোযোগ হওয়া উচিত সমস্যার বাস্তব সমাধানের দিকে। আমার বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য সেটিই। কে দায়ী, কে নয়, সেই বিতর্কে না গিয়ে আমরা কীভাবে জ্বালানি খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান খুঁজে পেতে পারি, সেটাই আমাদের চিন্তার কেন্দ্র হওয়া উচিত।
জ্বালানি সংকটের সমাধান প্রসঙ্গে লেখাপড়া করতে গিয়ে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে—বাংলাদেশ বর্তমানে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) খাতে বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল বাজার। অর্থাৎ সবকিছুই যে নেতিবাচক, তা নয়; বরং এ প্রবৃদ্ধি আমাদের উন্নয়নের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
আমি শুরুতেও বলেছি, জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিদ্যুৎ তার একটি বড় অংশ। কিন্তু এলপিজির ক্ষেত্রেও এ চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এর পেছনে কারণও স্পষ্ট—মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে, আয় বাড়ছে, আর সেই সঙ্গে জ্বালানি ব্যবহারের ধরনেও পরিবর্তন আসছে। এ প্রবণতা আমাদের উন্নয়নের গতিপথকে আরো শক্তিশালী করছে। যদি এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তবে শিগগিরই আমরা মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে প্রবেশ করব বলেই আশা করা যায়। যে গবেষণাপত্রের কথা বলেছি, সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ ইজ ওয়ান অব দ্য ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং মার্কেটস ইন টার্মস অব এলপিজি বিজনেস’।
এ তথ্য প্রমাণ করে মানুষ এলপিজিকে গ্রহণ করেছে ইতিবাচকভাবে। এর সুবিধাগুলো ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এ কনক্লেভের মূল প্রবন্ধ বা ‘কিনোট পেপার’-এর আলোচনায়ও আমরা সেই ইতিবাচক দিকগুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছি। সব মিলিয়ে এলপিজি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি আমাদের জন্য এক আশাব্যঞ্জক দিকনির্দেশনা। যেখানে চ্যালেঞ্জ আছে ঠিকই, কিন্তু সম্ভাবনার পরিধিও বিস্তৃত ও উজ্জ্বল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভবিষ্যতে সরকারের নীতিমালা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে এলপিজির সরবরাহ আরো সম্প্রসারণ হবে। আমি সেই প্রত্যাশাই রাখছি। সরকারও এ খাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকারে রাখবে বলেই বিশ্বাস করি।
আজকের ‘কিনোট পেপার’-এর আলোচনায় আমরা জেনেছি, বাংলাদেশের সার্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় এলপিজির অংশ বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ। সংখ্যাটিই আমাদের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। সামগ্রিক বিচারে এলপিজি খাতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয় দিকই রয়েছে। নেতিবাচক দিক হলো আমরা এখন পর্যন্ত এ খাতে বড় কোনো সাফল্য বা শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু ইতিবাচক দিকটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষুদ্র অংশ থেকেই আমরা ভবিষ্যতের এক বিশাল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি। সঠিক নীতি ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এ খাতকে দেশের জ্বালানিনিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভে পরিণত করতে পারব।
এরই মধ্যে জেনেছি ভবিষ্যতে প্রায় এক লাখ টন করে দুটি এলপিজি ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে এখনো স্পষ্ট নয়, পরিকল্পনাটি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এটি সম্পন্ন করতে পারবে নাকি একটি নির্বাচিত সরকার এসে তা বাস্তবে রূপ দেবে—সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এদিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
এবার এই কনক্লেভের মূল প্রবন্ধে অন্য যে বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমার কিছু সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা যাক। প্রথমেই বলা হয়েছে, আমাদের দেশের প্রাথমিক জ্বালানির ৬৫ শতাংশই আমদানিনির্ভর। অর্থাৎ আমরা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জ্বালানি বিদেশ থেকে আমদানি করি। এর মধ্যে কয়লাও রয়েছে। অথচ প্রায় ৩৫ বছর আগে দেশে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। সেসময় পরিবেশবাদীরা বর্তমানের মতো সক্রিয় বা প্রভাবশালী ছিলেন না। তবু বিভিন্ন কারণে বিশেষত ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত জটিলতা ও পরিবেশগত সমালোচনার কারণে সে প্রকল্পের সুফল বাংলাদেশ তেমনভাবে পায়নি।
আমরা এরই মধ্যে পারমাণবিক শক্তিকেও আমাদের এনার্জি ব্যাংকে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করছি এবং আশাবাদী যে শিগগিরই তা আমাদের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত হবে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—আমাদের দেশে যে উচ্চমানের কয়লা রয়েছে, তা আমরা কেন ব্যবহার করছি না? ৩০ বছর ধরে সম্পদটি আমরা অব্যবহৃত রেখেছি। সময় যত এগোচ্ছে, বিশ্বব্যাপী কয়লার বিরুদ্ধে সমালোচনা ততই বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো এ নিয়ে আরো কঠোর অবস্থান নেয়া হবে।
তবু বলতে হয়, আমাদের দেশের কয়লা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোৎকৃষ্ট। সেই কয়লা কিন্তু আমরা বিগত ৩০ বছর ব্যবহার করিনি। পরিবেশবাদীরা হয়তো আমার সমালোচনা করবেন। কিন্তু আমি তাদের পাল্টা জবাব দেব—কয়লা আমদানি করে আমরা একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প চালাচ্ছি, সেই কয়লা কিন্তু যে দেশ থেকে আসছে তারাই ব্যবহার করছে না। সালফারের উচ্চমাত্রার কারণে সেটি ব্যবহারের অযোগ্য বলে তারা ঘোষণা করেছে। আমি এখনো বিশ্বাস করি, দেশের এ হাই কোয়ালিটির কয়লা আমরা ব্যবহার করতে পারি। বর্তমান সময়ের উচ্চমানের টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে দূষণ অনেক কম হবে। এতে আমাদের জ্বালানি চাহিদার বড় একটি অংশও মেটানো যাবে। সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আবার এতে আমদানিনির্ভরতা কমবে, অর্থনীতি আরো স্থিতিশীল হবে। সর্বোপরি দেশের জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতার পথে আমরা এক ধাপ এগিয়ে যাব।
এমনিতেই দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এটা একটি কঠিন বাস্তবতা। এ প্রবণতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। যত বেশি আমরা এর ব্যবহার বাড়াচ্ছি, তত দ্রুতই এর মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক গঠন এমন যে এখানে গ্যাসের স্তরগুলো তুলনামূলকভাবে অগভীর ও দ্রুত নিঃশেষযোগ্য। এ কারণেই এখন থেকেই বিকল্প জ্বালানি উৎসের পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। আজ পরিকল্পনা না করলে আগামীতে তা আমাদের জন্য গভীর সংকট ডেকে আনবে। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
একটি দেশের জ্বালানির চাহিদা কোন কোন জায়গা থেকে পূরণ করা হবে তা ‘এনার্জি মিক্স’-এর মাধ্যমে বোঝানো হয়। এনার্জি মিক্সে আমরা পারমাণবিক নিয়েও কাজ করেছি। আশা করছি সেটি গ্রিডে কিছুদিনের মধ্যে যুক্ত হবে। এখন থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে বঙ্গোপসাগরে কিছু ড্রিলিং করা হয়েছিল। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য হারে গ্যাস উত্তোলন করেছিলাম। দুঃখের বিষয় হলো সে সময় এ বিষয়টিতে আমরা জোর দিইনি। ফলে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস ব্যবহার করতে পারিনি। সাগরতলে গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগটি বাংলাদেশের জন্য একটি ‘মিসড অপরচুনিটি। তবু আমি আশাবাদী—নীতিনির্ধারকরা যদি এখনই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেন, তবে কিছু সুযোগ এখনো রয়ে গেছে। আমাদের উচিত হবে সেই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে অন্তত একটি কার্যকর পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা হাতে নেয়া, যাতে সমুদ্র ও স্থলভাগের গ্যাসসম্পদ দেশের জ্বালানিনিরাপত্তায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। বিশ্বে এখনো কিছু বড় কোম্পানি রয়েছে যারা গ্যাস অনুসন্ধান ও ড্রিলিংয়ে সক্রিয়। আমাদের উচিত অবিলম্বে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যাতে দেশের এনার্জি পরিস্থিতির উন্নয়ন করা যায়।
যদিও ৪০ বছরে বৈশ্বিক জ্বালানি প্রেক্ষাপট ব্যাপকভাবে বদলে গেছে। আজকের দিনে সমুদ্রতল দেশে গ্যাস মজুদ থাকলেও তা উত্তোলনের জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেই বিনিয়োগে আগ্রহী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কারণ বিশ্ব এখন নবায়নযোগ্য শক্তি ও বিকল্প জ্বালানির দিকে বেশি ঝুঁকছে। এখানেও ‘এনার্জি মিক্স’ প্রসঙ্গটি প্রযোজ্য।
আমাদের জ্বালানি খাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস)। এলএনজি স্টোর করার জন্য এক ধরনের উচ্চমানের টেকনোলজিসম্পন্ন ট্যাংক প্রয়োজন হয়। এটি করতে বিনিয়োগ ও সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা এলএনজির দিকে না গিয়ে যদি এলপিজির দিকে সত্যিই যাই তাহলে আমাদের বিনিয়োগ লাগবে। এক্ষেত্রে যারা বাজেট করছেন তাদের আমি বলব, আপনারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন। তা না হলে বাংলাদেশ একটি এলএনজি স্টার্ভড কান্ট্রিতে পরিণত হবে।
তবে আমাদের বাস্তবতা হলো, কাজের ক্ষেত্রে আমরা এলএনজির পরিবর্তে এলপিজির দিকে মনোযোগ দিচ্ছি এবং সেই পথেই এগোচ্ছে দেশ। কিন্তু এলএনজি বা এলপিজি যে খাতে আমরা কাজ করছি, সেটি দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ। অর্থাৎ এই ২ শতাংশের ব্যবহার দিয়ে আমরা দেশের জাতীয় এনার্জি চিত্র বা বৈশ্বিক এনার্জি সিনারিও কোনোভাবেই উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারব না। এ থেকে স্পষ্ট—যদিও এলএনজি প্রযুক্তি অত্যন্ত উন্নত এবং ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় পরিবর্তন আনতে হলে এর পাশাপাশি অন্য বড় ধরনের উদ্যোগও নেয়া প্রয়োজন।
সবশেষে বলতে চাই, আমাদের দেশের গ্যাস মজুদ শেষ হয়ে যাবে। তাই এখনই আমাদের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যথাযথ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক। এজন্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোও অত্যন্ত জরুরি। এলপিজি তুলনামূলকভাবে সহজ প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। তাই আমরা আগামীতে এ খাতের উন্নয়নের প্রতি আরো জোর দেব বলেই আশা রাখি।
- ড. আব্দুল মঈন খান: জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি। সূত্র: বণিক বার্তা

