স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেসেজিং অ্যাপ দৈনন্দিন যোগাযোগের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রামের মতো প্লাটফর্মগুলো টেক্সট, ছবি, ভিডিও, ভয়েস নোটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে বন্ধু, পরিবার এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করেছে। এর মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্বব্যাপী মেসেজিং অ্যাপের শীর্ষে রয়েছে।
জার্মানভিত্তিক অনলাইন প্লাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০০ কোটি ছাড়িয়েছে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীনের উইচ্যাট (১৪০ কোটি ব্যবহারকারী) এবং তৃতীয় স্থানে ফেসবুক মেসেঞ্জার (১০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী)।
ডাটা বিশ্লেষণ প্লাটফর্ম এক্সপ্লোডিং টপিকস জানায়, প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপে ১০০ কোটির বেশি বার্তা আদান-প্রদান হয়। এর ওয়েবসাইটও অত্যন্ত জনপ্রিয়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বের জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের তালিকায় ১১তম স্থানে ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং পিসিতে অ্যাপ ও ওয়েব ভার্সনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। চলতি মাসে অ্যাপলের আইপ্যাডের জন্য প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র অ্যাপ চালু হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।
ব্যবহারকারীর সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও- মাসিক ডাউনলোডে টেলিগ্রাম হোয়াটসঅ্যাপকে ছাড়িয়ে শীর্ষে রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ কল, এআই প্রযুক্তি এবং নতুন ফিচার যুক্ত করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। স্ট্যাটিস্টা জানায়, তাৎক্ষণিক বার্তা (ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং) স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের এসএমএসের চেয়ে কম খরচে যোগাযোগের সুযোগ দিয়েছে। গ্রুপ চ্যাট, ছবি, ভিডিও, ভয়েস বার্তা, স্টিকার এবং ইমোটিকনের সুবিধা এই অ্যাপগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপ ২০০৯ সালে ব্রায়ান অ্যাকটন এবং জান কুম প্রতিষ্ঠা করেন। ইউক্রেন থেকে আমেরিকায় আসা জান কুম ১৯৯৭ সালে ইয়াহু!-তে কাজ করার সময় অ্যাকটনের সঙ্গে পরিচিত হন। ২০০৭ সালে তারা ইয়াহু! ছেড়ে দেন এবং ২০০৯ সালে আইফোনের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন। পুশ নোটিফিকেশনের সুবিধার কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়। ব্ল্যাকবেরি এবং অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন চালুর পর এটি অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে।
২০১৩ সালে হোয়াটসঅ্যাপ ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার লোকসানের সম্মুখীন হলে ২০১৪ সালে ফেসবুক (বর্তমানে মেটা) ১৯ বিলিয়ন ডলারে এটি কিনে নেয়। ২০১৬ সালে হোয়াটসঅ্যাপ পেইড মডেল বন্ধ করে এবং ভিডিও কলের সুবিধা যোগ করে। ২০১৭ সালে অ্যাকটন কোম্পানি ছেড়ে ‘সিগন্যাল’ অ্যাপে বিনিয়োগ করেন এবং ২০১৮ সালে কুম সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর হোয়াটসঅ্যাপ স্টিকার, গ্রুপ কল এবং এআই-চালিত ফিচার যুক্ত করে বিকশিত হয়েছে।
করোনা মহামারীর সময় ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এটি মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধে ফরওয়ার্ড বার্তার সীমা নির্ধারণ এবং এআই-ভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং সুবিধা চালু করে।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের চাহিদা মেটাতে ক্রমাগত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আইপ্যাড অ্যাপ চালু এবং এআই প্রযুক্তির একীকরণ এর ব্যবহার আরও সহজ ও বহুমুখী করবে। তবে টেলিগ্রাম এবং সিগন্যালের মতো প্রতিযোগীদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগ হোয়াটসঅ্যাপের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে যাচ্ছে।