চীনা বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তারা সফলভাবে ১ গিগাবিট-প্রতি-সেকেন্ড (Gbps) গতির ইন্টারনেট সংযোগ চালু করেছেন, যা এলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালিত স্টারলিংক ইন্টারনেটের চেয়ে পাঁচ গুণ দ্রুত।
এই সাফল্য এসেছে মাত্র ২ ওয়াট ক্ষমতার একটি লেজার ব্যবহার করে। যা পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থিরভাবে অবস্থান করা এক স্যাটেলাইট থেকে। এই স্যাটেলাইট স্টারলিংকের তুলনায় প্রায় ৬০ গুণ বেশি উচ্চতায় অবস্থান করছে।
বাতাসেই বাধা, সমাধানে চীনা প্রযুক্তি
স্যাটেলাইট লেজার ডাউনলিংক প্রযুক্তি দিয়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট পাঠানো সম্ভব হলেও এর প্রধান বাধা হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের অস্থিরতা। এতে লেজার রশ্মি বিকৃত হয়ে মাটিতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুর্বল ও অস্পষ্ট হয়ে যায়।
এই সমস্যার সমাধানেই চীনের দুই শীর্ষ প্রতিষ্ঠান—পেকিং ইউনিভার্সিটি অফ পোস্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস এবং চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস—AO-MDR নামে একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। প্রকল্পটি পরিচালনা করেছেন অধ্যাপক উ জিয়ান ও গবেষক লিউ চাও।
তাদের ভাষ্য, “এই পদ্ধতি দুর্বল সিগনালের কারণে যোগাযোগের গুণগত অবনমনকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করে।” এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদন চীনের বৈজ্ঞানিক জার্নাল Acta Optica Sinica-তে ৩ জুন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লিজিয়াংয়ের একটি মানমন্দিরে গবেষকরা প্রযুক্তিটি পরীক্ষা করেন। ১.৮ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে ৩৬ হাজার ৭০৫ কিলোমিটার উপরে থাকা একটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়।
টেলিস্কোপে থাকা ৩৫৭টি ছোট আয়না বিকৃত লেজার আলোকে পুনর্গঠন করে। ফলে বায়ুমণ্ডলের কারণে সৃষ্ট তরঙ্গ বিকৃতি কমে যায়। এর পাশাপাশি, একটি মাল্টি-প্লেন লাইট কনভার্টার (MPLC) ব্যবহার করা হয়। এটি আলোকে ভেঙে আটটি চ্যানেলে ভাগ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী তিনটি সিগনালকে “পাথ-পিকিং” নামের একটি বিশেষ অ্যালগরিদমের মাধ্যমে একত্রিত করা হয়।
এই অ্যালগরিদম পরিচালনায় ব্যবহৃত হয় বিশেষায়িত চিপ, যা রিয়েল টাইমে সেরা সিগনাল নির্বাচন করে।
গতি বাড়ছে, ভুল কমছে
এই নতুন পদ্ধতি কেবল সিগনালের শক্তি বাড়ায়নি, বরং তা সিগনাল ত্রুটিও কমিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র AO ব্যবহারের তুলনায় AO ও MDR একত্রে ব্যবহারে পারফরম্যান্স অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে যেখানে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকদের ভাষায়, কার্যকর সিগনাল পাওয়ার সম্ভাবনা ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯১.১ শতাংশে পৌঁছেছে। যা উচ্চমূল্যের তথ্য প্রেরণে এক বিশাল অগ্রগতি।