ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, যেখানে কয়েক দশক ধরে অপরাধমূলক কার্যক্রম একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার রাতে ২৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেয়ারিং টাইগারস ইউনিট অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি রিভলভার ও দেশীয় অস্ত্রসহ ৭ জনকে আটক করেছে। অভিযানটির মূল লক্ষ্য ছিল মাদক সাম্রাজ্যের আলোচিত নেতা মুনিয়া সোহেলকে গ্রেপ্তার করা, যিনি ক্যাম্প এলাকায় মাদকের অপব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
ক্যাম্পে স্থানীয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান শুরু হয়েছে আগষ্ট মাসের পর থেকে, যখন দেশজুড়ে অস্থিরতা এবং মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ ও গোলাগুলির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্যাংগুলো বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে এবং এসব সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
জানা গেছে, ক্যাম্পের অন্তর্দ্বন্দ্বে দুইটি প্রধান গ্যাং জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধে জড়িয়েছে—একদিকে ভুঁইয়া সোহেল ও সাইদপুরিয়া বাবুর দল এবং অন্যদিকে মোল্লা আরশাদ ও ইমতিয়াজের দল। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র সংগ্রহ এবং বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এখন এই ক্যাম্পে মজুদ রয়েছে, যা স্থানীয় গ্যাংগুলো নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহার করছে।
মোহাম্মদপুরের এই বস্তিতে মাদক নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বহু স্থানীয় ব্যক্তি প্রতিদিনই গুলির আওয়াজ শুনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত এবং আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। ক্যাম্পে প্রায় ২৫,০০০ মানুষের বসবাস, যার বেশিরভাগই উর্দুভাষী এবং তাদের বসবাসের এলাকাটি মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে অভিযান চালাচ্ছে। ক্যাম্প থেকে মাদক ও অস্ত্র নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এসব অভিযান অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।