দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছরে এডিস মশাবাহিত এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এসেছে ৩৩৭ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক দিনে নতুন করে ১২০৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪ জন, উত্তর সিটি করপোরেশনে ২ জন এবং খুলনা বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে তীব্র। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে ২৫১ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে ১৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৪৩২৬ জন রোগী ডেঙ্গু চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৬৯ হাজার ৪৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৮৭৯, যা মাসিক ভিত্তিতে এ বছর সর্বোচ্চ। চলতি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ডেঙ্গুতে ৭ হাজার ৬৩৯ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছর সবচেয়ে বেশি ছিল। ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এবং মৃত্যু হয় ১৭০৫ জনের। এই ভয়াবহ পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রচেষ্টা কার্যকর হতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতির উত্তরণে শুধু চিকিৎসা সরবরাহই যথেষ্ট নয়। বরং ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার জন্মস্থলগুলোকে লক্ষ্য করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়, যেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। স্থানীয় প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে, বিশেষ করে মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ ও এডিস মশা ধ্বংসের ক্ষেত্রে।
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতাও জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিণতির পরও যথেষ্ট সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং মশা বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।