অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হতে পারে, এমনটি জানিয়েছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন কপ২৯-এ অংশ নেওয়ার ফাঁকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। আল-জাজিরা এই ভিডিও সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করেছে গতকাল রোববার।
সাক্ষাৎকারে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে শুরু করে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারপ্রক্রিয়া, আগামী নির্বাচন, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও লক্ষ্য-
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ড. ইউনূস স্পষ্ট করেন যে, তাঁর কাছে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট ধারণা নেই। তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকারের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর। তবে নতুন সংবিধানে এটি চার বছর হতে পারে। তবে মানুষের চাওয়া অনুযায়ী এটি আরও কম হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো চায়, এই সংস্কারপ্রক্রিয়া বন্ধ করে শুধু নির্বাচন দিন, তাহলে আমরা সেটি করব। আমাদের লক্ষ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করা এবং একটি স্থিতিশীল, নতুন কাঠামো গড়ে তোলা।”
চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, “মানুষ নতুন কিছু চায়। শুধু নির্বাচন নয়, পুরো সরকারব্যবস্থার সংস্কার হচ্ছে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে।”
প্রশাসনিক পরিবর্তন ও জনগণের মতামত-
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, “আমরা জনগণের কাছে জানতে চাইছি, তারা এখনই নির্বাচন চায়, নাকি সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে চায়। সবকিছুই হচ্ছে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে।”
নতুন বাংলাদেশের ধারণার বিষয়ে তিনি বলেন, “নতুন বাংলাদেশ কেবল নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এমন একটি দেশ হবে যেখানে জনগণের আকাঙ্ক্ষাগুলি প্রতিফলিত হবে।”
শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ-
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও উঠে আসে। ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, “তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। ভারতের আশ্রয়ে থেকেও তিনি বাংলাদেশের বিক্ষোভে ইন্ধন দিচ্ছেন, যা দেশের জন্য ভালো নয়। আমরা এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি।”
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের দেওয়া বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়টি তুলে ধরা হলে ড. ইউনূস বলেন, “তিনি নিজেকে যা খুশি বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এমনকি ভারতও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।”
কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা-
ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভারতের সঙ্গে মিলে অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।” একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা দেশকে সেই অবস্থান থেকে তুলে আনতে কাজ করছি।”