এক মাস পেছানোর পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঘোষণায় বন্দরের সেবা নিতে আগত ব্যবসায়ীদের খরচ প্রায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
এর প্রভাব ইতিমধ্যেই দেশের শিপিং খাতে পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক একটি শিপিং কোম্পানি ইতিমধ্যেই চার্জ বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিয়েছে, যা পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্ভাবনা তৈরি করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, একের পর এক সেবাচার্জ বৃদ্ধিতে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
বন্দর ব্যবহারকারীরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে খালি এবং রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ওপর বাড়তি ট্যারিফ আরোপ করা হয়। তখনও ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানালেও তা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবার চার্জ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। তবে নৌপরিবহন উপদেষ্টার পরামর্শে এক মাস পেছানো হয়। ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, এ সময়ে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে চার্জ পুনঃনির্ধারণ হবে। কিন্তু তা হয়নি এবং ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত চার্জ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করা হয়েছে।
এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক ও সিকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, “বন্দরসহ অন্যান্য খাতে মাশুল ও খরচের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের জন্য চরম সমস্যা তৈরি করছে। বন্দরের বর্ধিত চার্জ কার্যকর করার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করা দুঃখজনক।”
চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সভিত্তিক শিপিং কোম্পানি সিএমএ-সিজিএম কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বাড়তি চার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ২৬ অক্টোবর থেকে নতুন চার্জ কার্যকর হবে বলে তারা নোটিশে জানিয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, অন্যান্য শিপিং কোম্পানিও একই পথে পা বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, “বন্দর ট্যারিফ বাড়ানোর পর শিপিং কোম্পানিগুলোও তাদের চার্জ সমন্বয় করছে। এতে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যা আমদানি-রপ্তানিকারকদের বহন করতে হবে। রপ্তানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এই অতিরিক্ত খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপাবে।”
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, “স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ট্যারিফ নির্ধারণ করা উচিত ছিল। আমাদের পক্ষ থেকে ১০–১৫ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে বলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মতামত উপেক্ষা করে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে।”
সারসংক্ষেপে, চট্টগ্রাম বন্দরে ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা-ব্যয় বাড়ছে, আমদানি-রপ্তানিকারীরা উদ্বিগ্ন, এবং ভোক্তাদের ওপর খরচের চাপ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

