একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক অবশেষে জামিন পেয়েছেন। বয়স, দীর্ঘদিনের কারাবাস এবং শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার তার জামিন মঞ্জুর করেন।
ওয়াহিদুল হককে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয় এবং সেখানেই তিনি সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্দি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত এই ৭৮ বছর বয়সী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা অবশেষে মুক্তি পেলেন, তবে তা শর্তসাপেক্ষে।
ওয়াহিদুল হকের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান। তিনি জানান, বয়সজনিত কারণ ও নানা শারীরিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ওয়াহিদুল হকের পক্ষে জামিনের আদেশ দিয়েছেন। তবে জামিনের শর্তে বলা হয়েছে, তিনি কোনো সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। তার পাসপোর্ট ট্রাইব্যুনালে জমা থাকবে এবং তিনি আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না।
২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে মামলাটি এগিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে মামলাটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে, যা দ্রুত নিষ্পত্তির পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
ওয়াহিদুল হক তাঁর পেশাগত জীবনের সূচনা করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১৯৬৬ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে। ১৯৭০ সালের মার্চে তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ অবধি সেখানে কর্মরত ছিলেন। এরপর পাকিস্তানে বদলি হয়ে ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকেন। দেশে ফিরে ১৯৭৪ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন এবং পরে ১৯৭৬ সালে পুলিশ বাহিনীতে এএসপি পদে যোগ দেন। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সালে এনএসআই-এর ভারপ্রাপ্ত ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে অতিরিক্ত আইজিপি পদ থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনালে ওয়াহিদুল হকের জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যা কেবল তাঁর বয়স এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ সুবিধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।