শিশু পর্নোগ্রাফি দেখা এবং তা ফোনে ডাউনলোড করে সংরক্ষণ-এই দুটি কর্মকাণ্ডকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে শিশু সুরক্ষায় নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সমাজে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা রক্ষায় এই নির্দেশনাকে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার, প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালার বেঞ্চ এই রায় প্রদান করে মাদ্রাজ হাই কোর্টের পূর্ববর্তী এক রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মাদ্রাজ হাই কোর্ট একটি মামলায় রায় দিয়েছিল যে শুধুমাত্র শিশু পর্নোগ্রাফি ডাউনলোড করে রাখা ও দেখা পকসো বা তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়কে ‘বড় ভুল’ আখ্যা দিয়ে জানায়, পকসো আইনের অধীনে এই দুটি কাজই শাস্তিযোগ্য।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় এসেছে ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে, যিনি ফোনে শিশু পর্নোগ্রাফি ডাউনলোড করে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য দায়রা আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট পকসো আইনের শিশু পর্নোগ্রাফি বিষয়ক ১৫তম ধারা উল্লেখ করে জানায়, কোনো ব্যক্তি যদি শিশু পর্নোগ্রাফি দেখেন বা ডাউনলোড করে নিজের কাছে রাখেন, তবে তাকে ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে জরিমানা বেড়ে হবে দশ হাজার টাকা।
আদালত আরও জানায়, যদি কেউ শিশু পর্নোগ্রাফি প্রচার করে বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে, তাহলে তার তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। একই ধরনের অপরাধ বারবার ঘটালে শাস্তির মেয়াদ বেড়ে সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়াও, সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্টকে পকসো আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে শিশু পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা স্পষ্টতই ‘যৌন নিপীড়নমূলক’ কর্মকাণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এই রায়কে ‘মাইলফলক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি শিশু সুরক্ষায় একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ দেশজুড়ে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।