সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে আগে থাকা কিছু কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে।
গত ৩ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ অনুমোদন হয়। এর আগে ২৫ মে সরকার একটি সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করেছিল। এতে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়গুলো কঠোর করা হয়েছিল।
পুরানো অধ্যাদেশে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ‘অনানুগত্যের শামিল’ হওয়া বিভিন্ন কাজ অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। যেমন অন্য কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করা, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা, কর্তব্যে বাধা দেওয়া ইত্যাদি। এছাড়া যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ছুটি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ বা অনুপস্থিত থাকার ক্ষেত্রেও শাস্তির বিধান ছিল।
সেসময় দণ্ড হিসেবে ধরা হয়েছিল, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করা যেতে পারে। অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হতো। দোষী সাব্যস্ত হলে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে দণ্ডের কারণ জানতে নোটিশ দেওয়া হতো। কিন্তু এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। তাদের পরামর্শে অধ্যাদেশটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশোধনে ‘অনানুগত্যের শামিল’–সংক্রান্ত ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করা, সরকারি আদেশ, পরিপত্র ও নির্দেশনা অমান্য বা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অন্য সরকারি কর্মচারীদের এসব কাজে প্ররোচিত করাও দণ্ডনীয় হবে।
নতুন অধ্যাদেশে তদন্ত প্রক্রিয়া আরও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত কর্মচারীর জ্যেষ্ঠ হতে হবে। অভিযুক্ত নারী হলে কমিটিতে অন্তত একজন নারী সদস্য থাকতে হবে। তদন্ত আদেশ পাওয়ার পর ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এ ছাড়াও অপরাধের ধরণ ও শাস্তি প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কর্মচারীদের অধিকারের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নমনীয় করে তুলবে।