বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে নতুন একটি ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে পাঁচ নারী আইনজীবীকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই অভূতপূর্ব নিয়োগ নারীর ক্ষমতায়নে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে, যা নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে এবং আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহিত করবে।
নতুন নিয়োগ পাওয়া পাঁচ বিচারপতি হলেন বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি তামান্না রহমান এবং বিচারপতি সাথিকা হোসেন। এই পাঁচ নারীর নিয়োগ আইন বিভাগের নারী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ঘটনা, যা দেশের আইনি ব্যবস্থায় নারীদের অবদানকে প্রমাণ করে।
আইন কমিশনের প্রথম নারী চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জিনাত আরা গণমাধ্যমকে বলেন, “২৩ জনের মধ্যে ৫ জন নারী, এটা একটি ভালো সংখ্যা। আইন পেশায় নারীরা ভালো করছেন। নারীদের যে অগ্রগতি হয়েছে, এ নিয়োগ থেকে তা বোঝা যায়। ভবিষ্যতে নারীরা আইন পেশায় আরো ভালো করবেন।”
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এই নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, “যে ৫ নারী আইনজীবী বিচারপতি হয়েছেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তাদের কর্মদক্ষতা ও মেধার বলেই তারা বিচারপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। নিশ্চই তাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হবেন।”
বিচার বিভাগে নারীদের এই নতুন পদে আসন গ্রহণ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, নারীরা যে কোনো ক্ষেত্রেই সক্ষমতা এবং যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
নতুন পাঁচ নারী বিচারপতির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-
মুবিনা আসাফ-
মুবিনা আসাফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আইন-পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালে জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি আইনপেশার শুরুতে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্টে ও ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি।
২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি মুবিনা আসাফ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান ছিলেন।
নাসরিন আক্তার-
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে আইনপেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্য নির্বাহী সদস্য, সিনিয়র সহ-সম্পাদক ও ট্রেজারার হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন নাসরিন আক্তার।
আইনুন নাহার সিদ্দিকা-
আইনুন নাহার সিদ্দিকার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের ও ২০২০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী হিসেবে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করেছেন।
তামান্না রহমান-
বিচারপতি তামান্না রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আইনপেশায় যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৫ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলএলএম ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
সাথিকা হোসেন-
সাথিকা হোসেন ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৩ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন।