বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপির সমস্যা এক গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামভিত্তিক ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানকে আদালত দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ আদেশের পেছনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক এশিয়ায় খেলাপি ঋণের বিপুল পরিমাণ অর্থ যা ৫০৬ কোটি টাকার অধিক।
বিচারক মুজাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে গতকাল এ নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। আদালতের নথিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক এশিয়ার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা গত ২৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে ওয়েস্টার্ন মেরিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঋণের পরিমাণ ৫০৫ কোটি ৯০ লাখ ১ হাজার ৯২৪ দশমিক ২৪ টাকা, যার বিপরীতে বন্ধকির পরিমাণ খুবই নগণ্য।
অবশ্য ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড দেশের ২০ শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় স্থান পেয়েছে। ব্যাংক এশিয়ার কাছে ঋণ পরিশোধের পরিবর্তে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে। তাই আদালত ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় ৬ নম্বর বিবাদী ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন কিন্তু অন্যান্য বিবাদীরা এখনো মামলা আদালতে হাজির হননি। ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে আলোচনা চলাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার-১২ অনুযায়ী, একজন বিবাদী আংশিক ডাউন পেমেন্ট দিয়ে মামলার নালিশি ঋণের দায় স্বীকার করেছেন। তবে সম্পূর্ণ দায় পরিশোধ না করায় আদালত ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানের বিরুদ্ধে এই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ঋণখেলাপির সংখ্যা এবং তার প্রতিক্রিয়া দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ব্যাংকগুলো ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হচ্ছে এবং ঋণগ্রহীতাদের প্রতি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি ও কৌশলের উপর একটি নতুন আলোকপাত করছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান ও ওয়েস্টার্ন মেরিন কি দ্রুত তাদের ঋণ পরিশোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে? দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা ঋণখেলাপির সমস্যা মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী সিগন্যাল প্রদান করে এবং এটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
এই ঘটনার পর বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যাংকগুলো কীভাবে তাদের নীতি পরিবর্তন করবে এবং ঋণগ্রহীতাদের সাথে সমঝোতা করবে সেটিই এখন সকলের নজরকেন্দ্র।