জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের পাঁচটি কারাগারে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহের ঘটনায় ২ হাজার ২৪০ বন্দী পালিয়ে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অনেককে ফিরিয়ে আনা গেলেও এখনো ৭২১ জন পলাতক। তাদের মধ্যে রয়েছে জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। পাশাপাশি এখনো উদ্ধার হয়নি কারাগার থেকে লুট হওয়া ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র।
কারা সূত্র জানায়, এই বন্দীরা পালানোর সময় গাজীপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, শেরপুর ও নরসিংদীর কারাগারগুলোতে হামলা চালান। তারা ফটক ভেঙে কারাগারে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করেন, ফাইলপত্র নষ্ট করেন, অনলাইন সিস্টেম ধ্বংস করে দেন এবং বন্দীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জে ট্রেনে ছিনতাই ও হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল মিয়া ওরফে জুয়েল কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যান ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট। আট মাস পর ২৬ জুন ঝিনাইদহের জলিলপুর বাজারে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
তবে শুধু রাসেল নয়, জুলাই-আগস্টে যারা পালিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৫২০ জনকে আবার কারাগারে ফিরিয়ে আনা গেলেও জামিন পান ১ হাজার ১৩০ জন। পলাতক ৭২১ জনের অনেকেই চরম ঝুঁকিপূর্ণ—যাঁদের মধ্যে ৬০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও ৯ জন জঙ্গি।
নরসিংদী কারাগারে ১৯ জুলাই ফটক ভেঙে ঢুকে পড়ে শত শত লোক। বন্দীদের মুক্ত করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ৯ জন জঙ্গিসহ মোট ৮২৬ বন্দী পালিয়ে যান। পরে আত্মসমর্পণ করেন ৬৪৬ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে ৩৮ জনকে। এখনো পলাতক ১৪২ জন। সাতক্ষীরায় ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় শতাধিক দুর্বৃত্ত সীমানাপ্রাচীর পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে ফটকের তালা ভেঙে ৫৯৬ বন্দীকে বের করে নেয়। আত্মসমর্পণ করেন ৫২৯ জন, গ্রেপ্তার হন ২৩ জন। এখনো পলাতক ৪৪ জন, যাঁদের মধ্যে দুজন নারী। শেরপুরে একইদিনে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যান ৫১৮ বন্দী। সেখান থেকে লুট হয় ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র (৫টি চায়নিজ রাইফেল ও ৪টি শটগান)। এখন পর্যন্ত ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও পলাতক ৩৮০ জন।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় হামলা চালিয়ে তৃতীয় তলার একটি গুদামে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ৬ বন্দী নিহত হন, ২০২ জন পালিয়ে যান। তাঁদের অধিকাংশই সন্ত্রাসবিরোধী মামলার আসামি। এখন পর্যন্ত ৬৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকি ১৩৭ জন পলাতক। ৭ আগস্ট দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দীরা বিদ্রোহ করে ৯৮ জন পালিয়ে যান। এদের মধ্যে ৬০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ৯ জন জঙ্গি। এখনো পলাতক ১৭ জন।
কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, পালিয়ে যাওয়া ৬৯ জন বন্দীকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলমান থাকলেও অধিকাংশ পলাতক বন্দীর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, কারাগার থেকে লুট হওয়া কিছু চায়নিজ রাইফেল ও শটগান এখনো উদ্ধার হয়নি, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কারা কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, বহু বন্দী হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। অনলাইন সিস্টেম ধ্বংস হওয়ায় অনেক পলাতকের তথ্যও আর নেই।