আন্তর্জাতিক বাজারে টানা পঞ্চম দিনেও সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে অনিশ্চয়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা মূল্যবান ধাতুর দাম বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা সোনার বাজারকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
গতকাল স্পট মার্কেটে সোনার দাম আগের দিনের তুলনায় ১০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি আউন্স ২৭৩৩ ডলারে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বাজারে সোনার দাম ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি আউন্স ২৭৪৮ ডলারে স্থির হয়েছে। ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো এ সম্পর্কে বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা নিরাপদ আশ্রয় বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বাড়িয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও দাম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।”
এদিকে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে হিজবুল্লাহর আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত স্থানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে বৈরুতের শত শত বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার এই পরিস্থিতিতে সোনার বাজারকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষক স্টাউনোভো আরও উল্লেখ করেন, “বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমবর্ধমান চাহিদাও স্বর্ণের দামকে সমর্থন করছে। আমরা ধারণা করছি, আগামী ১২ মাসের মধ্যে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ২৯০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। ফেডের সুদহার কমানো এই ধারণাকে আরও সমর্থন করবে।” সিএমই ফেড ওয়াচ টুলের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা নভেম্বরে ফেডের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ বলে ধারণা করছেন।
এই সময়ে, ডিসেম্বরে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা করছে। যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতি গত মাসে ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও আগামী মাসে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বিবেচনা করছে।
এদিকে, ধাতুর বাজারে সোনার পাশাপাশি রুপার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১২ বছরের মধ্যে রুপার দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল স্পট মার্কেটে রুপার দাম আগের দিনের তুলনায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.০৬ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে, যা ২০১২ সালের শেষের পর সর্বোচ্চ। স্পট প্ল্যাটিনামের দাম ১০.৫ শতাংশ বেড়ে ১১৮৯ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে, যা জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সর্বোচ্চ। তবে গতকাল প্যালেডিয়ামের দাম ১০.৩ শতাংশ কমে ১০৭৫ ডলার ৮৭ সেন্ট প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে।
এভাবেই চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।