ভারতের শেয়ারবাজারে গতকাল ব্যাপক দরপতন ঘটেছে, যেখানে প্রধান সূচক সেনসেক্স ৯৩০ পয়েন্ট কমে ৮০ হাজার ২২০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, নিফটির সূচকও ৩০০ পয়েন্ট কমে ২৫ হাজারের নিচে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারের প্রতিটি খাতে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই মাসে ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজারের পতন ঘটে চলেছে এবং চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বড় ধরনের দরপতনের সাক্ষী হয়েছে বাজার।
ভারতের শেয়ারবাজারের মূলধন কমেছে ৮ দশমিক ৯ লাখ কোটি রুপি, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এদিকে, মে মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের সময়ও শেয়ারবাজারে পতন হয়েছিল, তবে পরে বাজার পুনরুদ্ধার করেছিল। কিন্তু চলতি অক্টোবরে আবারও সেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদ হ্রাস করার সম্ভাবনা এবং দেশটির বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। এছাড়া, চীনের অর্থনীতি চাঙা করতে নতুন প্রণোদনা দিচ্ছে, যা ভারতীয় বাজারের জন্য আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলতি মাসে সূচকের পতনের পেছনে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের অনিশ্চয়তাও একটি প্রধান কারণ। ১ অক্টোবর ইসরায়েলে তেহরান একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, আর ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব ভারতীয় শেয়ারবাজারে পড়ছে।
পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের কারণে অপরিশোধিত তেলের দামও বেড়েছিল, যদিও পরে তা কিছুটা কমেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইসরায়েল যদি ইরানের তেলক্ষেত্রে হামলা চালায়, তাহলে অপরিশোধিত তেলের দাম আবারও বৃদ্ধি পাবে, যা ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই উদ্বেগের কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন।
ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সেবি সম্প্রতি বেশ কিছু কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। একই সাথে, চীনের শেয়ারবাজারে নতুন ঊর্ধ্বগতি দেখা যাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একাংশ ভারতের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির ফলে ভারতের শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল থেকে টানা ১৬ দিন ধরে এই পতন চলমান। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৯৩ বাজার থেকে ৫০০ কোটি রুপি তুলে নিয়েছেন। অক্টোবর মাসেই তাদের তোলা বিনিয়োগের পরিমাণ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি, যা এক মাসে সর্বাধিক।
এখন পর্যন্ত এক মাসে বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার নিরিখে এটি সর্বোচ্চ। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চে কোভিডের সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সর্বাধিক ৬১ হাজার ৯৭৩ কোটি রুপি তুলে নিয়েছিলেন।
গত সপ্তাহের শেষ লেনদেনের দিনে কিছুটা বাজার স্থিতিশীল হওয়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল, তবে তার আগে টানা কয়েকদিন পতনের চিত্র ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার আভাস বিনিয়োগকারীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পর, বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তোলার জন্য শেয়ার বিক্রি শুরু করেছেন, যা এই কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।