বাংলাদেশে পাট সোনালি আঁশ নামে পরিচিত। এই পাট এক সময় এদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি থাকলেও বর্তমানে ব্যাপকভাবে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের কারণে এর কদর ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। চাহিদা না থাকায় পাট চাষ করে চাষিরা ভুগছেন চরম হতাশায়। নেই আগের মতো দাম। ফলে কমেছে চাষ। পাটজাত শিল্পের কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তৈরি হচ্ছে না সুতাসহ পাটের বিভিন্ন জিনিসপত্র।
পাট একটি পচনশীল বস্তু। যাহা পরিবেশ বন্ধব। পাট থেকে বিভিন্ন সুতা, হস্তশিল্প, ব্যাগ, দড়ি, পাত্র ইত্যাদি তৈরি করা হতো। অতীতে পাটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস রপ্তানি করা হতো বিদেশে। একসময় দেশ-বিদেশে পাটের তৈরি জিনিসের চাহিদা ছিল ব্যাপকহারে। আর কৃষকরা ভালো দাম পওয়ায় পাট চাষ করতেন হাসিমুখে।
এই সোনালী আঁশ খ্যাত পাটশিল্প ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে দেশের একক বৃহত্তম শিল্প ছিল। এদেশে পাটশিল্পের সূচনা ঘটে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানও এর আশপাশেই গড়ে ওঠে। ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম-প্রধানত: এ তিনটি অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে এদেশের পাটকলগুলো।বিশ্ববাজারে পাটের সামগ্রীর চাহিদা থাকলেও পাটকলগুলো বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে পাটচাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে করে পাটশিল্পে ধস নামতে শুরু করেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন পাট শ্রমিকরা। অধিকাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। অথচ সোনালি আঁশখ্যাত পাটের এ বেহাল দশা হওয়ার কথা কখনো কল্পনাও করা হতো না।
পাট ও পাটজাত থেকে তৈরি দ্রব্যাদি এক সময় ছিল দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। সুষ্ঠুভাবে দেখভাল করার জন্য এই শিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ও গঠন করা হয়েছে। সুতরাং সরকারের উচিত পাটশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পরিবেশবান্ধব পাটকলগুলো পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা। পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা, উন্নত পাট চাষের প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং ঋণ সহায়তা করা। বাজারে কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম পায়, সে ব্যবস্থা করা। দেশেও বিদেশে পাটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস বাজারজাত করার ব্যবস্থা করা। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের পরিবর্তে পাটের তৈরি পলিজুট ব্যাগ ব্যবহার করা। এছাড়াও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পাটের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো। পাটের বাজার আবারও যাতে সম্প্রসারিত হয়, সেজন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং বাইরের দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে পাটের পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা জোরদার করা। যাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় এবং অর্থনীতির চাকা সচল হয়। সর্বোপরি দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হয়।