বাংলাদেশে চলমান মূল্যস্ফীতির পেছনে আগের সরকারের ভুল নীতি ও নীতিগত দীর্ঘসূত্রতা দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। শনিবার ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বিজনেস স্কুল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিএসইসি’র কমিশনার ফারজানা লালারুখ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
অর্থ উপদেষ্টা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন- “বিগত সরকার সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সঠিক তথ্য না থাকায় নীতিমালা কার্যকর হয়নি, যা দেশের জনগণকে মূল্যস্ফীতির বোঝা বইতে বাধ্য করেছে।”
তিনি আরও বলেন- “একটার পর একটা ভুল নীতি, দুর্নীতি এবং সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণের ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর ঋণের সুদের হার কিংবা আয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। এতে দেশের অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।”
গত ১৫ বছর ধরে অর্থনীতির ভঙ্গুর ভিত্তি, তথ্য-উপাত্তের রাজনীতিকীকরণ এবং দুর্নীতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “জিডিপি বাড়লেও কর-জিডিপি অনুপাত বাড়েনি। এমনকি বেসরকারি বিনিয়োগেও স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ, আমরা ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকা পড়েছি।”
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আগের সরকার উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ করায় দেশের অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেও কার্যকর ফল আসেনি। ৪২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নে নেমে এসেছে, অথচ সংকট কাটেনি।”
সালেহউদ্দিন বলেন, “আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে দুর্বল অর্থনৈতিক নীতিমালা পেয়েছি। এত দীর্ঘ সময় ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া এটি কখনোই সমাধান সম্ভব নয়।”
অর্থ উপদেষ্টা ও অন্যান্য বক্তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন।
সালেহউদ্দিন আরো জানান, “ভবিষ্যতের জন্য এমন নীতি তৈরি করা হচ্ছে, যা অর্থপাচার রোধে কার্যকর হবে।”
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “রাষ্ট্রের কার্যকর সংস্কার ছাড়া সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। ‘দুই পয়সার সংস্কার’ দিয়ে আমরা এগোতে পারব না।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, “দুর্নীতি আবার ফিরে এলে জনগণের ক্ষোভ ফুঁসে উঠবে। ভবিষ্যতে সঠিক পথে চলার জন্য নতুন নীতির ভিত্তি তৈরি হচ্ছে, যা আগামী প্রজন্মকে অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় সংকট আরও গভীর হবে।”
অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্বচ্ছ নীতির অভাব দেশের বর্তমান সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বক্তারা। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।