দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্ববাজারে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষায় এই খাতে সহায়তা প্যাকেজ বাড়িয়েছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার চিপ উৎপাদন খাতে সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে ৩৩ ট্রিলিয়ন কোরিয়ান ওন অর্থাৎ প্রায় ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করেছে। এ সহায়তা ২০২৩ সালে ঘোষিত ২৬ ট্রিলিয়ন ওনের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেশি।
বিশ্ববাণিজ্যে চিপ সরবরাহের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ঘিরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে চীনের সঙ্গে বেড়ে চলা প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় কোরিয়ার এই উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কোরিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বাড়তি অর্থায়ন কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত ব্যয় সামলাতে সহায়তা করবে যা তারা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বহন করছে।
বিশেষত চিপ খাতে সরাসরি আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে আগের ১৭ ট্রিলিয়ন ওনের জায়গায় এবার ২০ ট্রিলিয়ন ওন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন এই প্যাকেজের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কোরিয়ার প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পকে বৈশ্বিক চাপ ও পরিবর্তনশীল নীতিনির্ধারণী পরিবেশে স্থিতিশীল রাখা।
দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং দেশটি স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও এসকে হাইনিক্স-এর মতো বিশ্বের শীর্ষ মেমোরি চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের জন্মস্থান। তবে চিপ ডিজাইন এবং কন্ট্র্যাক্ট চিপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের কিছু প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।
২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ১৪১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি করেছে যা দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় ২১ শতাংশ। এর মধ্যে চীনে রপ্তানি হয়েছে ৪৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের চিপ পণ্য।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার ঘোষণা করেছেন, তিনি আগামী সপ্তাহে আমদানিকৃত সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন। তবে খাতভিত্তিক কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে শুল্কনীতি নমনীয় হবে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই ঘোষণার পরপরই মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্কনীতি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সে কারণে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সক্রিয় আলোচনা চালিয়ে যাবে সিউল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেকশন ২৩২’ তদন্তের আওতায় থাকা সেমিকন্ডাক্টর এবং বায়োফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের আমদানি বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া তার অটোমোবাইল শিল্পকে কেন্দ্র করে একটি জরুরি সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানি বেড়ে গেলেও সম্ভাব্য শুল্ক এই খাতকে চাপে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই সরকার স্থানীয় বাজারে চাহিদা বাড়াতে গাড়ি শিল্পকে করছাড়, ভর্তুকি ও অর্থনৈতিক প্রণোদনার আওতায় আনবে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তি ও রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়ার এই আগাম উদ্যোগ দেশটির শিল্পক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে।