বাংলাদেশে পাঁচটি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা। খাতগুলো হলো—ডিজিটাল ফাইন্যান্স, খাদ্য ও পানীয় শিল্প, আবাসন ও নির্মাণ এবং জ্বালানি।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ‘সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই) এ তথ্য জানান। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই সামিটের সমাপ্তি হয়। সংবাদ সম্মেলনে গ্রো৪০০ নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে খাদ্য ও আবাসন খাতে ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।
বর্তমানে সৌদি আরব এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ৩০ কোটি ডলার। ব্যবসায়ীরা জানান, দক্ষ কর্মী তৈরি করা এবং সৌদি আরবে আস্থা তৈরি করতে পারলে এই রপ্তানি আগামী তিন বছরের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। সামিট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ এখন শুধু তৈরি পোশাক নয়। সফটওয়্যার, তথ্য প্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং-এও আমরা বিশ্বমানের অবস্থান তৈরি করেছি। এই সম্ভাবনার অংশীদার হতে চান সৌদি উদ্যোক্তারা।” তিনি জানান, দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে শিগগির সৌদি আরবে ‘শো কেস বাংলাদেশ’ আয়োজন করা হবে। সেখানে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো সৌদি বিনিয়োগকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, “বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনসহ বিভিন্ন বড় কর্মসূচি সৌদি আরবকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ করেছে। এতে দেশটিতে কর্মীর চাহিদা বেড়েছে এবং নতুন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষি খাতসহ বিভিন্ন খাতে সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা দেখেছি আগামী তিন বছরের মধ্যে সৌদিতে রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। তবে সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। সৌদি আরব তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করছে। আমরা তাদের আস্থা অর্জন করতে পারলে বিনিয়োগ পেতে পারব। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত সৌদি বিনিয়োগবান্ধব নীতি তৈরি করা এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করা।” সৌদি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সরকারের কার্যকর ভূমিকা কামনা করেছেন।
সামিটে অংশ নেওয়া সৌদি কোম্পানি হ্যালিওপার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল স্যাসেন বলেন, “বাংলাদেশ তৈরি পোশাকশিল্পে অনেক এগিয়ে। তবে সফটওয়্যার ও সেমিকন্ডাক্টর খাতেও এখন বিশ্বমানের কাজ হচ্ছে। দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী কাজ করতে আগ্রহী। এ কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।”
সৌদি আরবের আল কাইবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খালিদ আল হারবি বলেন, “মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। যৌথ বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই কর্মশক্তিকে আরও দক্ষ করা যায়, যা উভয় দেশের জন্য লাভজনক।”
এ সময় সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য, পানীয় ও কৃষিপণ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি হালাল ও কৃষিপণ্য আমদানি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিন দিনব্যাপী বিজনেস সামিট শুরু হয় ৬ অক্টোবর। এই উপলক্ষে ২০ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। দুই দেশের শীর্ষ নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও পলিসিমেকাররা অংশ নেন।
আয়োজনে একাধিক থিম্যাটিক সেশন ছিল, যেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স ও প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে এসএবিসিসিআই সহসভাপতি আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ, পরিচালক ও প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক উজমা চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

