মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সব বাণিজ্য আলোচনা “তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল” করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি অভিযোগ করেছেন—কানাডা একটি “প্রতারণামূলক” বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে, যেখানে প্রয়াত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কানাডার ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করে। এর জবাবে কানাডাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, এবং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের মধ্যে ইস্পাত–অ্যালুমিনিয়াম খাতে নতুন এক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ট্রাম্প সেই আলোচনা পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “তাদের আচরণ একেবারে নিন্দনীয়। তাই কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা এখানেই শেষ।”
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অন্টারিও প্রদেশ সরকারের তৈরি একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে ১৯৮৭ সালের রোনাল্ড রেগানের একটি রেডিও ভাষণের অংশ ব্যবহার করা হয়। সেখানে রেগান বলেছিলেন, বিদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ শেষ পর্যন্ত চাকরিহানি ও বাণিজ্যযুদ্ধ ডেকে আনে। বিজ্ঞাপনটি মূলত ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনামূলক বার্তা বহন করছিল।
অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড মঙ্গলবার বলেন, “আমাদের বিজ্ঞাপনটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজরে এসেছে বলে শুনেছি। সম্ভবত তিনি সেটা পছন্দ করেননি।”
তবে রোনাল্ড রেগান প্রেসিডেন্টিয়াল ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বিজ্ঞাপনটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “অন্টারিও সরকার রেগানের বক্তব্যের অংশবিশেষ বেছে নিয়ে সেটিকে ভুলভাবে সম্পাদনা করেছে। তারা কোনো অনুমতি নেয়নি কিংবা উদ্ধৃতি ব্যবহারের অনুমোদনও পায়নি।”
ফাউন্ডেশন আরও জানিয়েছে, তারা এখন আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
কানাডার ফেডারেল সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের বাজারে অন্যায় সুবিধা নিতে দেব না। আলোচনায় ব্যর্থ হলেও আমাদের অবস্থান পরিষ্কার।”
ট্রাম্প এর আগে থেকেই শুল্ককে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তার প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার ১৯৩০ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি নিয়মিতই বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, যা ব্যবসায়িক মহল ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো তাদের ২০২০ সালের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (USMCA) পুনর্বিবেচনা করতে বসবে। কিন্তু ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, উত্তর আমেরিকার আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্পর্ক এখন নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়তে পারে।

