মাইক টাইসন। এক সময়ের বক্সিং কিংবদন্তি। যার নাম শুনলেই রিংয়ের রোমাঞ্চকর লড়াই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ১৯৮৫ সালে পেশাদার বক্সিংয়ে আত্মপ্রকাশ করা টাইসন নিজের শক্তি, গতি এবং ধ্বংসাত্মক ঘুষির জন্য পরিচিত। ২০০৫ সালে ক্যারিয়ারের শেষ পেশাদার লড়াইয়ে লড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৯ বছর পর আবারও তিনি রিংয়ে ফিরছেন।
আজ, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর), টেক্সাসের এটিএন্ডটি স্টেডিয়ামে টাইসন লড়বেন ২৭ বছর বয়সী ইউটিউবার জেক পলের বিপক্ষে। এটি আট রাউন্ডের একটি প্রদর্শনী লড়াই। যেখানে প্রতি রাউন্ড দুই মিনিট করে চলবে। লড়াইয়ে ব্যবহার করা হবে ১৪ আউন্স ওজনের গ্লাভস। টাইসনের এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি লড়াই নয় বরং তার শারীরিক এবং স্নায়ুবিক সক্ষমতারও পরীক্ষা।
ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এটিএন্ডটি স্টেডিয়ামে। এটি এমন একটি মঞ্চ, যেখানে একদিকে রয়েছে বক্সিংয়ের পুরনো ধারার প্রতিনিধি টাইসন, আর অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের তারকা ইউটিউবার জেক পল।
টাইসনের এই প্রত্যাবর্তনের পেছনে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা এবং রিংয়ে নিজের পুরনো শক্তি প্রমাণের তাগিদ কাজ করছে। তবে এই লড়াই শুধু তার ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ নয় বরং বক্সিংয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
টাইসনের এই ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল জুলাইয়ে কিন্তু তার আলসারের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। এখন, তার শারীরিক এবং স্নায়ুবিক পরীক্ষা শেষে ম্যাচটি আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব লাইসেন্সিং অ্যান্ড রেগুলেশন (টিডিএলআর) বক্সারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে। টাইসনকে স্নায়ুবিক এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ পরীক্ষা দিতে হয়েছে। পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক হওয়ায় তাকে রিংয়ে নামার অনুমতি দেওয়া হয়।
টাইসনের রিংয়ে ফেরা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বহুবার মাথায় আঘাত পেয়েছেন, যা তাকে স্নায়ুবিক ক্ষতির ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ওয়েল কর্নেল মেডিকেল কলেজের স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. নীতিন কে. শেঠি জানান, “বয়স ৪০ পেরোনো বক্সারদের ক্ষেত্রে গুরুতর মাথার আঘাতের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাদের দীর্ঘমেয়াদি মস্তিষ্কের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা পারকিনসন বা ক্রনিক ট্রমাটিক এনসেফালোপ্যাথির (সিটিই) মতো জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে।”
ড. শেঠির মতে, বারবার মাথায় আঘাত পাওয়া বক্সারদের ক্ষেত্রে বড় নকআউট নয় বরং ছোট ছোট আঘাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবই বেশি বিপজ্জনক। এটি অনিদ্রা, মাথা ঘোরা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
বক্সিংয়ে স্নায়ুবিক ঝুঁকি নতুন কিছু নয়। ১৯২৮ সালে প্রথম “পাঞ্চ ড্রাংক” শব্দটি ব্যবহার করে বক্সারদের মস্তিষ্কের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এখনো এই ঝুঁকির সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিশ্ব মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বক্সিং নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে, তবে খেলাটির রোমাঞ্চ এবং দ্বৈরথের কারণে এটি এখনও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। টাইসনের রিংয়ে ফেরা এই ঝুঁকির বিষয়টি নতুন করে সামনে নিয়ে আসছে।
পরিশেষে বলা যায়- মাইক টাইসনের বয়স ৫৮ হলেও তার লড়াইয়ের আগ্রহ কমেনি। রিংয়ে তার প্রত্যাবর্তন শুধু বয়সের চ্যালেঞ্জ নয় বরং স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বক্সিংয়ের নিরাপত্তার গুরুত্বকেও সামনে এনেছে। এই লড়াই টাইসনের জন্য আরেকটি অধ্যায় হতে পারে। এটি বক্সিংয়ের ভবিষ্যৎ এবং সুরক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছি আমরা।