সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ নতুন নেতা হিসেবে নাঈম কাসেমকে নিযুক্ত করেছে। যা লেবানিজ আন্দোলনের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে ইরান সংগঠনটির কর্মকাণ্ডে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে।
শুক্রবার মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় সংগঠনের পূর্ব প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার মাত্র এক মাস পর, গত মঙ্গলবার শুরা কাউন্সিলের মাধ্যমে কাসেমকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করা হয়েছে। হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সূত্র মতে, এই সময়ে নেতৃত্বের শূন্যতা মোকাবিলার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল, যাতে দলের ভেতরে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।
হিজবুল্লাহর ৩২ বছরের নেতৃত্বদানকারী নাসরুল্লাহ ছিলেন আঞ্চলিক ও সামরিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। কিন্তু কাসেমের অভিজ্ঞতা মূলত সাংগঠনিক কার্যক্রম ও ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে। এই অভিজ্ঞতার অভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইরান হিজবুল্লাহকে কৌশলগতভাবে সহযোগিতা করবে, যদিও সরাসরি হস্তক্ষেপ এড়াতে চেষ্টাও করবে। লেবানিজ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি রিজক বলেন,
“নাসরুল্লাহ ছিলেন ইরানের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব, যা কাসেমের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। ফলে, ইরান বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও সক্রিয় হতে পারে।”
এদিকে, নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর অনেকেই আশা করেছিলেন হাশেম সাফিয়েদ্দিন পরবর্তী নেতা হবেন। কিন্তু সাফিয়েদ্দিনও ইসরাইলি হামলায় নিহত হলে, দীর্ঘদিন ধরে নাসরুল্লাহর ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কাসেমই একমাত্র পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। এইভাবে কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহর ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে।
নাঈম কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহর সামরিক কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। তবে কাসেমের রাজনৈতিক ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিফলিত হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি লেবানিজ রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও, নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ্যে আসেননি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাসেমের নতুন দায়িত্ব স্থানীয় রাজনৈতিক পরিসরে প্রভাব তৈরি করতে পারে। যেখানে তিনি দলটির শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবেন।
হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, কাসেমের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাকে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। যা প্রেসিডেন্সি ও দলের অভ্যন্তরীণ বিতর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে। একদিকে, কাসেমকে সংগঠন পুনর্গঠনের জন্য স্থানীয় সমর্থন আদায় এবং দলের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। রিজক বলেন,
“যুক্তরাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ প্রতিপক্ষরা যে কোনো দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে, তাই কাসেমকে এখনই শক্তিশালী হতে হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, কাসেমের নেতৃত্বের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ একটি দলীয় নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। যেখানে শুরা কাউন্সিলের সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেবেন। উল্লেখযোগ্য, নাসরুল্লাহ ছিলেন দলের মহাসচিব এবং ইরানের প্রতিনিধিত্বকারী একজন শক্তিশালী নেতা, যার অভিজ্ঞতা কাসেমের নেই।
সুতরাং, কাসেমের নেতৃত্বের অধীনে হিজবুল্লাহ ইরানের কৌশলগত প্রভাবের আওতায় আরও শক্তিশালী হতে পারে, যদিও সরাসরি অংশগ্রহণের বদলে তারা সহায়তার মাধ্যমে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে। সামগ্রিকভাবে, কাসেমের এই নতুন দায়িত্ব সংগঠনটির আগামী দিনগুলোকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে। যেখানে তাকে দক্ষতার সাথে লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
নাঈম কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহর নতুন অধ্যায় শুরু হলো। যা দেশের রাজনৈতিক কাঠামো এবং ইরানের সাথে তাদের সম্পর্ককে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে। বর্তমানে, কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ একটি নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে।