মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহায়তা দিচ্ছে বেলারুশ। ড্রোন হামলা প্রতিরোধে এই প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিস ফর মিয়ানমার (জেএফএম)। থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী–এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে জেএফএম জানায়, তারা দুই দেশের মধ্যে চলমান সামরিক সহযোগিতার একাধিক প্রমাণ পেয়েছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, ফাঁস হওয়া একাধিক নথিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে— বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেলস্পেৎসভনেশতেকনিকা মিয়ানমারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করছে ‘ভি৩ডি রাডার প্রযুক্তি’ এবং ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।
এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে ‘প্যানোরামা অটোমেশন’ ও ‘ভস্টক থ্রিডি রাডার’ প্রযুক্তি, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রোন শনাক্ত ও প্রতিরোধে সক্ষম। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো— এসব ড্রোনই ব্যবহার করছে মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইরত প্রতিরোধ বাহিনীগুলো।
জেএফএম আরও জানায়, মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তারা বর্তমানে বেলারুশের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড রেডিওইলেকট্রনিকস–এ আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করছে। এর উদ্দেশ্য— নেপিডো ও মান্দালয়ে অবস্থিত সামরিক কারখানাগুলোতে অস্ত্র উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো।
২০২১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তাবে মিয়ানমারে অস্ত্র রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানানো হলে বেলারুশ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। চলতি বছরের মার্চে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং বেলারুশ সফর করেন। গত শুক্রবার তিনি আবার মিনস্কে যান এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে অস্ত্র ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন।
এ সফরে মিন অং হ্লাইং বেলারুশের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অপটিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল অর্গানাইজেশন–এও যান। প্রতিষ্ঠানটি নাইটভিশন ডিভাইস এবং ভারী যানবাহনের ব্রেক তৈরিতে বিশেষায়িত। সফরের সময় তিনি বেলারুশে অধ্যয়নরত মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের আহ্বান জানান।
জেএফএম জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগেই দুই দেশের মধ্যে সামরিক গবেষণা ও প্রযুক্তি বিনিময়ে চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেলারুশের সামরিক কারিগরি প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাধিকবার মিয়ানমার সফর করেছেন। মিয়ানমারের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করে তারা যৌথ সামরিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ চালাচ্ছেন।
এদিকে, জেএফএম মিয়ানমারের সামরিক স্বার্থে বেলারুশের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত ‘ডাইন্যাস্টি গ্রুপ’ এবং বেলারুশের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর জরুরি ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনটির মুখপাত্র ইয়াদানার মাউং বলেন, “রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনে বেলারুশ যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, তাতে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক গভীর উদ্বেগের বিষয়।” তিনি আরও বলেন, “জান্তার কাছে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হলে এখনই কার্যকর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জরুরি।”