গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস সরাসরি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছে। হামাসের বক্তব্যে নেতানিয়াহুকে ‘প্রতারক ও ভণ্ড’ আখ্যা দেয়া হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে, সে যে বিবৃতি দিয়েছে বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা কমানো হবে—তাতে কোনো বিশ্বাস নেই।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ নবান্নার সঙ্গে বৃহস্পতিবার ঘোষিত শান্তি পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিক অংশ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং জানান, ইসরায়েল আংশিকভাবে প্রত্যাহারের একটি প্রাথমিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে— যা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-হস্তান্তরের পথ খোলে।
হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী (আইওএফ) গাজার বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক ঘণ্টায় ভয়াবহ অপরাধ ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। সংগঠনটি বলেছে, “শুধু আজ সকাল থেকেই ৭০ জন নির্বোধ বেসামরিক পণ্ডিত ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত।” হামাস এই হামলাকে ‘রক্তাক্ত উসকানি’ বলে অভিহিত করেছে এবং এটিকে দখলকারী শক্তির ‘প্রতারণা ও ভণ্ডামির’ ফসল বলে আখ্যা দিয়েছে।
হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে আবারো আহ্বান জানিয়েছে যে তারা যেন তাদের আইনগত ও মানবিক কর্তব্য পালন করে ফিলিস্তিনি জনগণকে সুরক্ষা ও সহায়তা দেয়। হামাস দাবি করেছে, গাজার ওপর অবরোধ এবং গণহত্যা যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয়—এর জন্য দখলকারী শক্তির ওপর সর্বোচ্চ চাপ ব্রত করা প্রয়োজন।
হামাস নিজের বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে স্বাধীনচেতা মানুষদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে—ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি বাড়িয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণহত্যা অভিযানের বিরুদ্ধে চাপ গঠন করতে। পাশাপাশি দেশের ভিতরে ও বাইরে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা নেয়ারও আহ্বান এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে (ট্রুথ সোশ্যালে) বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি হামাসকে পাঠিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি লিখেছেন—হামাস যদি সম্মতি দেয়, তবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ট্রাম্প আরো বলেছেন, এই প্রস্তাবটি পরবর্তী ধাপের প্রত্যাহারের শর্ত তৈরি করবে এবং তিন বছর ধরে চলা এই সংকট মোকাবিলায় একটি টেকসই সমাধানের পথ খুলে দেবে।
প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিক পরিমণ্ডলে দ্রুতই আলোড়ন তৈরী করেছে—কিন্তু এ ব্যাপারে ইসরায়েলি পক্ষ ও হামাস—উভয়ের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পৃথক স্বর রয়েছে এবং মাঠের বাস্তবতা এখনও উত্তপ্ত।
গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় স্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত। অনেকবারই যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথাবার্তা হলেও মাঠে আক্রমণ-প্রতিফলন থেমে থেমে ফিরে আসে। নানা আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততায় আলোচনার পরেও ত্রাণ, নিরাপত্তা ও বন্দি মুক্তির সার্বিক বিষয়গুলো জটিল রয়ে গেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে; তাতে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রণয়ন ও প্রচারও একটি অংশ। তবে হামাস বলেছে, তারা কিছু শর্ত মেনে চলতে আগ্রহী থাকলে আলোচনা হবে—তবু গাজার ওপর ‘বিদ্যমান সামরিক ও প্রশাসনিক অবরোধ’ কিভাবে শিথিল হবে এবং কে কিভাবে নিরুপায় বিজ্ঞপ্তি দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অখণ্ডভাবে সংগ্রহ করা প্রতিবেদনে দফায় দফায় জানানো হচ্ছে—গাজায় বিমান হামলা ও আর্টিলারির ধাক্কায় বহু বাড়িঘর ধ্বংস হচ্ছে; বেসামরিকদের অবস্থার আরো খারাপ হচ্ছে; ত্রাণসামগ্রীর প্রবেশ পথে বাধা ও নিরাপত্তার অভাব দেখা যাচ্ছে। মৃতের সংখ্যা যত বাড়ছে, তত আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তত তীব্র হচ্ছে।
ট্রাম্প ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশের ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিক্রিয়া আসছে—কিন্তু মাঠে আগুন থামেনি। প্রেসিডেন্টের উদ্ধৃতি বার্তায় শান্তি-প্রকল্প আরম্ভে সম্ভাব্য পথ উন্মোচিত হলেও হামাসের কঠোর সমালোচনা এবং ইসরায়েলের চলমান হামলা অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি প্রক্রিয়া বাস্তবে শুষ্কমাঠের মতোই অনিশ্চিত থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হামাস জানতে দিয়েছে—তারা যদি মানবিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রক্ষা করে, তবেই গাজা জনগণের নিরাপত্তা ও উদ্বাস্তুত্ব হ্রাস পেতে পারে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে তৎপর হতে হবে—তথ্য যাচাই, মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া এবং কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য মাঠের সঠিক ছবি তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন যাতে পক্ষগুলোর বর্ণনা থেকে বিচ্যুত না হয়ে বাস্তব চিত্র সমাজে পৌঁছতে পারে।

