পৃথিবী থেকে চাঁদকে যতই স্পষ্ট দেখা যাক, এর একটি দিক আমাদের জন্য চিরকাল অদৃশ্য ও রহস্যময়। সেই অদেখা দিকের রহস্য উন্মোচনে চীন সম্প্রতি একটি যুগান্তকারী মিশন পরিচালনা করেছে। চাঁদের এই অংশে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে গঠিত শিলার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় এ আবিষ্কার চাঁদের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে উন্মোচিত করেছে।
গবেষণার পটভূমি-
চীনের ‘চেংয়ি ৬’ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের অদেখা দিক থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অত্যাধুনিক এই ল্যান্ডার যান গত মে মাসে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে এবং প্রায় দুই মাস ধরে নমুনা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে। এরপর সেই নমুনাগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে রেডিওমেট্রিক ডেটিং পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করেন চীনা ও মার্কিন গবেষকরা।
গবেষণার ফলাফল-
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ৪২০ কোটি বছর আগে চাঁদে ভয়াবহ এক অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। সেই অগ্ন্যুৎপাত থেকে গঠিত হয় আগ্নেয়শিলা। আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো, প্রায় ২৮৩ কোটি বছর আগেও চাঁদে আরেকটি অগ্ন্যুৎপাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার অ্যান্ড সায়েন্স’ -এ প্রকাশিত হয়েছে।
চাঁদে আগ্নেয়শিলার সন্ধান সম্পর্কে চীনের ইনস্টিটিউট অব জিওলজি ও জিওফিজিকসের অধ্যাপক কিউলি লি বলেন, “অবিশ্বাস্যভাবে এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ গবেষণা। এটি চাঁদ ও গ্রহ বিজ্ঞানের জন্য অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক।”
অদেখা দিকের রহস্য-
বহু মানুষের ধারণা, চাঁদের অদেখা দিকটি অন্ধকার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ঠিক নয়। চাঁদের এই অংশও দিনের আলো পায়। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে চাঁদ সবসময় একই দিক পৃথিবীর দিকে রাখে। ফলে চাঁদের অন্যদিক আমাদের চোখের আড়ালে থাকে। তবে এর মানে এই নয় যে, এটি চিরকাল অন্ধকারে ঢাকা।
কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ?
চাঁদের দৃশ্যমান দিক নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। কিন্তু অদেখা দিকটি ছিল প্রায় সম্পূর্ণভাবে অনাবিষ্কৃত। চীনের এই অভিযানের ফলে চাঁদের অদেখা দিকের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের নতুন দরজা খুলে গেছে। গবেষকরা আশা করছেন, এই আবিষ্কার চাঁদের গঠন, তার অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস এবং সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের বিবর্তন সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।
ভবিষ্যতের দিগন্ত-
এই সফল মিশন চাঁদ সম্পর্কিত গবেষণার নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। গবেষকরা মনে করছেন, চাঁদের মতো সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের লুকানো রহস্য উন্মোচনে এ ধরনের অভিযানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চাঁদের অদেখা দিক থেকে পাওয়া এই নতুন তথ্য শুধু বিজ্ঞানীদের কৌতূহল মেটাবে না বরং মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ পথকে আরও উজ্জ্বল করবে।